শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা শিক্ষা তথা জ্ঞান লাভের জন্য যায় তারা শিক্ষার্থী নামে পরিচিত। শিক্ষার্থীরা ছয় থেকে ষোল বছর বয়স পর্যন্ত মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। বছরে ৭/৮ মাস, সপ্তাহের ছয়দিন এবং প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত তাদেরকে মাদ্রাসায় অবস্থান করতে হয়। দেশ বা জাতির জন্য ভবিষ্যতে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠার জন্য তাদের মাদ্রাসায় অবস্থানকালীন সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। মাদ্রাসার পরিবেশ, আসবাবপত্র, শিক্ষার উপকরণ ইত্যাদি যদি তাদের স্বাস্থ্যের অনুকূল না হয় তাহলে তাদের শরীর ও মন সুস্থ ও সবল হয়ে গড়ে উঠবে না। মানসিক উন্নতি তথা নৈতিক চরিত্র গঠনের উপযুক্ত ক্ষেত্র হচ্ছে মাদ্রাসা। আদর্শ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে সৎ গুণাবলি অর্জন করতে সমর্থ হয়। তেমনি শারীরিক সুষম বিকাশের জন্য মাদ্রাসায় স্বাস্থ্যকর পরিবেশ যেমন- বিশুদ্ধ পানি, পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ মধ্যাহ্নকালীন টিফিন, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা-প্রস্রাবখানা, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করে এমন শ্রেণিকক্ষ, উন্মুক্ত খেলার মাঠ, ফুল ও ফলের বাগান এমন ধরনের মাদ্রাসা হলো স্বাস্থ্যসম্মত মাদ্রাসা। শিক্ষার্থীদের উন্নত স্বাস্থ্যসেবার জন্য নিচের বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে-
ক. মাদ্রাসা : খোলামেলা জায়গা যেখানে চারদিক থেকে অবাধে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে, শব্দ দুষণ থাকে না এবং সহজে যাতায়াত করা যায় এমন উঁচু স্থানে মাদ্রাসার অবস্থান হতে হবে।
খ. খেলার মাঠ : খেলাবিহীন শিক্ষার্থীর জীবন কল্পনা করা যায় না। মাদ্রাসা সংলগ্ন খেলার মাঠ থাকতে হবে। শিক্ষার্থীরা সারাবছর বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা এই মাঠে চর্চা করতে পারবে।
গ. স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি পায়খানা ও প্রস্রাবখানা : শ্রেণিকক্ষ থেকে কিছুটা দূরে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও প্রস্রাবখানা এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থাকতে হবে।
ঘ. বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ : বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম অনুষঙ্গ। শহরে সরবরাহকৃত পানি ফুটিয়ে পান করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। গ্রামাঞ্চলে গভীর নলকূপের পানি বিশুদ্ধ, তাই তা পানযোগ্য । পুকুরের পানি হলে তা ব্যবহারের পূর্বে ফুটিয়ে নিতে হবে।
ঙ. শ্রেণিকক্ষ, আসবাবপত্র : অস্বাস্থ্যকর না হয় সেদিকে লক্ষ রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
মাদ্রাসার স্বাস্থ্য কার্যক্রম : মাদ্রাসা স্বাস্থ্য কার্যক্রম (Madrasah Health Programme) শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষার্থীরা গ্রীষ্ম, বর্ষা বা শীত ঋতুতে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়। পূর্ব থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এসব রোগ থেকে সহজে আরোগ্য লাভ করা যায়। যদি মাদ্রাসায় স্বাস্থ্য কার্যক্রম থাকে তাহলে শিক্ষার্থীরা এই কার্যক্রমের আওতায় সাধারণ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারে। মাদ্রাসার স্বাস্থ্য কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হচ্ছে-
শিক্ষার্থীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা : শিক্ষার্থীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রাথমিক চিকিৎসা ও মাদ্রাসার স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখার জন্য প্রত্যেক মাদ্রাসায় উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। এজন্য একজন উপযুক্ত চিকিৎসক পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। জেলার সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে এসব পরিদর্শক নির্ধারিত দিনে নির্দিষ্ট মাদ্রাসায় হাজির হয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করবেন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মাদ্রাসায় স্বাস্থ্য পরিদর্শককে সর্বপ্রকার সহযোগিতা করবেন। স্বাস্থ্য পরিদর্শক প্ৰত্যেক শিক্ষার্থীর বয়স, ওজন, রক্তের গ্রুপ, রক্তের চাপ, নাড়ির গতি, দৈহিক গঠন, চোখ, কান, দাঁত, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস প্রভৃতি বিষয় পরীক্ষা করবেন এবং একটি কার্ডে তা লিখবেন। এই কার্ডকে শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য কার্ড বলে।
স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র : স্বাস্থ্য কর্মসূচি যে সব মাদ্রাসায় নেই সেখানে একজন শিক্ষককে কিছু সাধারণ প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষার্থীদের সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীর অসুস্থতা জটিল হলে নিকটস্থ স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রের সহায়তা গ্রহণ করা যায় অথবা হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল কিংবা বিশেষায়িত হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা আছে।
শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য কার্ড : মোটা কাগজের স্বাস্থ্য কার্ডটিতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যাদি মুদ্রিত অবস্থায় থাকবে। কার্ডে যা থাকবে তা হলো-
মাদ্রাসার নাম ও ঠিকানা
নমুনা স্বাস্থ্য কার্ড
১। শিক্ষার্থীর নাম..................................................................
২। পিতা/মাতার না...................................................
৩। ঠিকানা.............................................................
৪। জন্ম তারিখ..........................................................................................বয়স.............
৫। শ্রেণি ...................................................................রোল নং.....................
৬। উচ্চতা................................................................ওজন.....................
৭। শরীরের গঠন কাঠামো............................................................
৮। রক্তচাপ............................................................................
৯। চোখ/নাক/কান/গলা/ফুসফুস/হৃৎপিণ্ড..............................................................
১০। অতীত অসুস্থতা................................................................
১১। বর্তমান অসুস্থতা................................................................................
১২। পরবর্তী স্বাস্থ্য পরীক্ষার তারিখ ও সময়.......................................................
স্বাস্থ্য পরিদর্শকের স্বাক্ষর
কাজ-১ : একটি স্বাস্থ্যসম্মত মাদ্রাসার বর্ণনা বাড়ি থেকে লিখে এনে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন কর। কাজ-২ : মাদ্রাসায় স্বাস্থ্য পরিদর্শকের কাজ এবং একটি নমুনা স্বাস্থ্যকার্ড তৈরি কর। এরপর শ্রেণিতে দলে বিভক্ত হয়ে আলোচনা কর। |